চাঁদ নিয়ে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদের আগ্রহের কমতি নেই। জ্যোতির্বিদরাও চাঁদের নানা দিক নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ১৫২ বছর পর আবার একসঙ্গে চাঁদের তিনটি বিশেষ অবস্থার সাক্ষী হতে যাচ্ছে পৃথিবীবাসী। একই সময়ে বুধবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা যাবে বিশাল আকারের নীলাভ উজ্জ্বল চাঁদ। সেইসঙ্গে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণও।
বাংলাদেশের আকাশেও দেখা যাবে বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। ঢাকায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে আংশিক ও ৬টা ৫১ মিনিটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। পূর্ণ গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় হবে ৭টা ২৯ মিনিটে। চন্দ্রগ্রহণ স্থায়ী হবে মোট ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। রাত ১০টা ৮ মিনিটে গ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হবে।
এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি সূর্যাস্তের আগে উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল থেকে একসঙ্গে দেখা যাবে এ বিরল দৃশ্য। আর আন্তর্জাতিক তারিখরেখার কারণে সূর্যাস্তের পর এশিয়ার মধ্য ও পূর্বাঞ্চল, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় এ দৃশ্য দেখা যাবে।
বিজ্ঞানীরা জানান, একসঙ্গে চাঁদের এই তিন অবস্থা অবলোকন বিরল ঘটনা। এ সময় পূর্ণগ্রাস গ্রহণের পাশাপাশি চাঁদকে স্বাভাবিকের তুলনায় আকারে ১৫ ভাগ বড় এবং ৩০ ভাগ উজ্জ্বল ও লালচে কমলা দেখাবে। যার নামকরণ করা হয়েছে 'ট্রাইফিকটা' বা 'সুপার ব্লু ব্লাড মুন'। এই তিন মহাজাগতিক দৃশ্য সর্বশেষ একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল ১৮৬৬ সালে। এমনিতেই চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি চলে এলে আমরা একে উজ্জ্বল ও বিশাল রূপে দেখি, যাকে 'সুপার মুন' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর চান্দ্রবর্ষ সৌরবর্ষের তুলনায় গড়ে এগারো দিন কম হওয়ায় প্রতি ২ দশমিক ৭ বছরে এক মাসে দুটি পূর্ণিমা হয়। একইভাবে প্রতি ১৯ বছরে সাতবার দেখা পাওয়া যায় নীলাভ চাঁদ বা ব্লু মুনের। অন্যদিকে পরিভ্রমণ অবস্থায় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য কখনও একই সরলরেখায় এসে পড়ে। এ সময় ক্ষণিকের জন্য পৃথিবী থেকে চাঁদকে অদৃশ্য দেখায়। এ মুহূর্তটিকেই বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মো. শাহজাহান মৃধা জানান, সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখা ক্ষতিকর হলেও চন্দ্রগ্রহণ তা নয়। চন্দ্রগ্রহণ দেখতে বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ আবশ্যক নয়, তবে পরিস্কারভাবে দেখতে সেগুলোর ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবি তোলার জন্য যে কোনো জুমলেন্সসহ ক্যামেরাই যথেষ্ট। এই গ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্র নানা প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি জানান, রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি হবে মান্ডার গ্রিন মডেল টাউনে। মেঘমুক্ত আকাশ থাকা সাপেক্ষে ক্যাম্প সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চাঁদ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পে ১৪ ইঞ্চি এবং ৮ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ, ৬ ইঞ্চি ওরিয়ন টেলিস্কোপ ও ফটোমিটার থাকবে। এ ছাড়াও গ্রহণ চলাকালে কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে বড় পর্দায় ও অনুসন্ধিৎসু চক্রের ফেসবুক পেজে সরাসরি তা সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।
শাহজাহান মৃধা আরও জানান, ঢাকার বাইরেও অনুসন্ধিৎসু চক্র রাজশাহী শাখা ও অ্যাস্ট্রনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট যৌথভাবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে, অনুসন্ধিৎসু চক্র পঞ্চগড় শাখা জেলা প্রশাসন আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় সদর সরকারি অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে ও অনুসন্ধিৎসু চক্র বরিশাল শাখা বিএম কলেজ খেলার মাঠে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প আয়োজন করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন